ইদানিং হরহামেশাই ঘরে কিংবা অফিসে, বিদ্যালয়ে কিংবা প্রার্থনালয়ে এসি বা এয়ার কন্ডিশনার বিস্ফোরণের মত অনাকাঙ্খিত ঘটনা দেখা যাচ্ছে। এর দায় কি শুধুই ভুঁইফোঁড় সস্তা এসি কোম্পানিগুলোর? নাকি এর মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনযাবত চলমান এসির রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি নিদারুণ অবহেলা?
ঠিক কি কারনে এসি বিস্ফোরিত হয় এবং এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?
সেসব তথ্য দেখে নেওয়া যাক একনজরেঃ
এসি বিস্ফোরণের কারণ:
১। যদি ঘরের সাইজ অনুপাতে কম টনের এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করে থাকেন, সেটি দীর্ঘ সময় চলতে থাকার পর ধারণক্ষমতার বেশি লোড নিতে না পেরে অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। সেটা থেকে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা অতিমাত্রায় বেড়ে যায়।
২। যেকোন নিম্নমানের এসির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এর অভ্যন্তরে ফ্যান ও তারের বিদ্যুতের ব্যবস্থায় গোলমাল থাকা। ফলে সেখান থেকে সৃষ্টি হওয়া যেকোন ধরণের কারিগরি সমস্যা থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।
৩। তবে সময় মাফিক এসি রক্ষণাবেক্ষণ না করার কারনেও খুব বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এসির কারিগরি ত্রুটি থেকে অথবা কম্প্রেসরের গ্যাসের লিকেজ থেকে যেকোন মূহুর্তে এসিতে আগুন ধরে সেটি পুরো ঘরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
৪। দীর্ঘদিন ধরে সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম না করালে বিস্ফোরণের আশংকা বেড়ে যায় বহু গুণে।
৫। কম্প্রেসরের ধারণক্ষমতার চেয়ে অধিক চার্জ করলে এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করলে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু কম্প্রেসরের জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট না থাকলেও ভেতরের তাপমাত্রা চাহিদার চেয়ে বেড়ে গিয়ে একই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
৬। এসির কনডেনসারে অনেক ময়লা জমলে কম্প্রেসরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
৭। এমনকি এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ তৈরি হলে সেখান থেকে হাই প্রেশার তৈরি হয়ে কম্প্রেসর বিস্ফোরিত হতে পারে।
৮। প্রয়োজন মাফিক সঠিক রেটিং এর সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার না করলে।
৯। চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার না করলে।
১০। উইন্ডো এসির সামনে ঘরের জানালা বা দরজার পর্দা এসে এসির বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত করে এসিকে গরম করে তুলতে পারে।

এসি বিস্ফোরণের প্রতিকারঃ
১। সবচেয়ে বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য ব্র্যান্ডের এসি, কম্প্রেসর এবং রেফ্রিজারেন্ট ব্যবহার করতে পারলে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব।
২। আর দীর্ঘদিন পর এসি চালু করার আগে একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে এসিটি পরীক্ষা করে নেওয়া উত্তম।
৩। নিয়মিত এসির কনডেনসার সাধ্যমত পরিষ্কার রাখা।
৪। এসির কম্প্রেসরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা এবং প্রেশার তৈরি হচ্ছে কি না, সেটা নিয়মিত যাচাই করা।
৫। এমনকি কম্প্রেসরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ রেফ্রিজারেন্ট আছে কি না, তা অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান দ্বারা পরীক্ষা করা ও কম্প্রেসরের লিমিটের চেয়ে বেশি রেফ্রিজারেন্ট চার্জ না করা এবং সঠিক পদ্ধতিতে রেফ্রিজারেন্ট চার্জ করা।
৬। এসির ভেতরের পাইপের কোথাও ব্লকেজ আছে কি না পরীক্ষা করা।
৭। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে ও সঠিকভাবে এসির ভ্যাকুয়াম করা।
৮। খুবই ভালো মানের এবং সঠিক স্পেকের পাওয়ার ক্যাবল ব্যবহার করা।
৯। সঠিক রেটিংয়ের সার্কিট ব্রেকার ব্যবহার করা।
১০। ঘরের বারান্দা কিংবা খুব কাছে না রেখে ঘরের বাইরে এসি আউটডোর সেট করা।
এসব বিষয়ে একটু খেয়াল রাখতে পারলেই অনাকাঙ্ক্ষিত যেকোন বিপদ অনেকাংশেই এড়ানো সম্ভব। বাঁচতে চাইলে অবশ্যই এসিকে একটি জীবন্ত বোমায় রূপান্তরিত করতে চাইবেন না নিশ্চয়। নিজে সতর্ক থাকুন, অপরকেও সচেতন করে তুলুন।
আরও পড়ুন,
\\গ্রীষ্মের প্রচন্ড গরমেও যেভাবে এসির বাড়তি বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারবেন!//