১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস কেন?
বিজয় দিবসঃ শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৩
বাংলাদেশের একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে জন্মের ইতিহাস অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার, অনেক কষ্টের, অনেক বীরত্বের আর অবশ্যই অনেক গৌরবের। যার চুড়ান্ত পরিণতি আমরা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর তারিখে পাই। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, ১৬ ডিসেম্বর কি দিবস? ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস। কিন্তু এই তারিখ টি তে আসার আগ পর্যন্ত অনেকগুলো সংগ্রাম এর ধাপ পেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের মানুষ। ১৬ ডিসেম্বর এর সম্পূর্ণ গুরুত্ব বুঝতে হলে অবশ্যই এই ওই মুহুর্ত গুলো দেখে আসা দরকার।
বাংলাদেশের বিজয় দিবস কবে?
বাংলাদেশের বিজয় দিবস পালিত হবে ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর শনিবারে ।
১৬ ডিসেম্বর এর আগের গুরুত্বপূর্ণ তারিখ গুলো
১৯৪৭ সালের ১৪ এবং ১৫ আগস্ট যথাক্রমে পাকিস্তান এবং ভারত স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জন্মলাভ করে। পাকিস্তান এর দুইটি ভাগ পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান এ বিভক্ত হয়। কিন্তু এই দুই দেশের মাঝে বিশাল ভারত রাষ্ট্র ছিল যার কারণে দুইটি ভাগের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা কিছুটা বাধাগ্রস্থ হত। এছাড়াও পশ্চিম পাকিস্তান পক্ষপাত এর ভিত্তিতে শাসন করছিল যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের অনেক ন্যায্য অধিকার ই ক্ষুন্ন হত। সম্পদের বন্টন, চাকরির অগ্রাধীকার, প্রতিরক্ষা, এবং আরও অনেক মৌলিক বিষয়ে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে নানা বৈষম্য করা হত।
প্রথম গুরুত্বপূর্ণ তারিখ টি ছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, যেখানে পূর্ব পাকিস্তানের ভাষা বাংলা হওয়ার ন্যায্য দাবি কে পশ্চিমা শাসক রা প্রত্যাখ্যান করে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষভের মধ্যে গুলি বর্ষণ করে। অনেক শান্তিকামী বাঙালী নাগরিক প্রাণ বরণ করে। সেখান থেকেই স্বাধীনতার বীজ এর বপন হয়।
রাজনৈতিক দিক দিয়েও পূর্ব পাকিস্তান বঞ্চিত হচ্ছিল। পূর্ব পাকিস্তানের জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশীয় নেতৃত্ব ছিল সময়ের দাবী। কিন্তু পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী কোনভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করতে রাজী হন নি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এর নেতৃত্বে আওয়ামী এলজি, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পশ্চিমা শাসক রা ক্ষমতা হস্তান্তর করে নি।
এভাবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সাধারণ বাঙালী জনগণের উপর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী আক্রমণ করে যেখানে অগণিত সাধারণ মানুষ কে নিরীহভাবে হত্যা করা হয়। এই ঘটনার পরে আর পূর্ব পাকিস্তান নামে বাঙালী রা পরিচয় দিতে চায় নি। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশ হিসেবে নতুন রাষ্ট্রের এক সংগ্রাম শুরু হয়।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস কিভাবে হলো
২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার পর স্বাধীনতা যুদ্ধে সাধারণ জনতা, বাঙালী সামরিক বাহিনী, এবং সর্বস্তরের জনগণ পাকিস্তানী জান্তা দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমে পরে। ১১ টি সেক্টরে ভাগ হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী মানুষ হত্যা এবং ধ্বংসযজ্ঞ চালায় সারা দেশে। কিন্তু বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এক সময় ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা দের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। কিন্তু প্রায় শেষ মুহুর্তে এসে অনেক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদারেরা। কিন্তু এক সময় এসে পাকিস্তানী বাহিনী হাড়ে হাড়ে টের পায় যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকানো কোনভাবেই সম্ভব নয়।
১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী বাহিনী মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানী বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী, ভারত এবং মুক্তিবাহিনী যৌথবাহিনীর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাগজিত সিং আরোরার কাছে লিখিত আত্মসমর্পণ করেন। এভাবেই বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধারা অন্তিম বিজয় পায় মুক্তিযুদ্ধে। আর এইজন্যই এই তারিখ কে বাংলাদেশের জাতীয় বিজয় দিবস বলা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি বছর এই দিন আমরা উদযাপন করি আর বিজয়ের গৌরব থেকে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনেও অনুপ্রাণিত হই।
বিজয় দিবসের গুরুত্ব
আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক, এবং জাতীয় সর্বস্তরেই অনুপ্রেরণা যোগায়। বিজয় দিবসের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি বছর মনে করি আমাদের বীর দের অপরিপূর্ণ ত্যাগ এর কথা। এর সাথে আমরা হাজার প্রতিকূলতা পার করে কিভাবে অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে হয় তাও শেখায়। বাংলাদেশী হিসেবে আমরা যেখানেই থাকি আমরা চেষ্টা করবো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিজেদের জীবনে জড়িয়ে রাখতে, যেখানেই থাকি যে অবস্থাতেই থাকি আমরা যাতে দেশের প্রয়োজনে যাতে এগিয়ে আসতে পারি, তার জন্য চেষ্টা করে যাবো।