বাইরে এখন গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদ। এর মধ্যেই বছর ঘুরে হাজির হয়েছে পবিত্র মাহে রমজান। তাই বলে কি রোজা রাখবেন না? এই গরমে সারাদিন না খেয়ে থাকাটা স্বাস্থ্যের জন্য বিরাট ঝুঁকি হতে পারে যদি না ইফতারের সময় টেবিলে থাকে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। ইফতারে পুষ্টিকর খাবার মেনু শুধু আপনার সারাদিনের পুষ্টির চাহিদাই পূরণ করবে না, সাথে যোগাবে সুস্থ শরীরে পরের দিন রোজা রাখার শক্তি। তাই শুধু ইফতার ও সেহরীর সময়সূচী ২০২২ জানলেই হবে না, সেই সাথে জানতে হবে কিভাবে গরমের মধ্যেও ইফতারের সঠিক নিয়ম মেনে সুস্থ থাকতে হয়।
রমজান মানেই টেবিলভর্তি বিভিন্ন মজাদার ইফতার আয়োজন। ঘরে ঘরে গৃহিণীদেরও ইচ্ছে থাকে ইফতারের আয়োজনটা হোক কিছুটা আলাদা। তাই রোজার মাস এলেই চারিদিকে দেখা যায় হরেক রকমের ইফতার আইটেম এর রেসিপি। কিন্তু প্রায়ই আমরা ইফতারের গুরুত্বকে অবহেলা করে অস্বাস্থ্যকর ইফতার রেসিপিতে ভর্তি করে ফেলি ইফতারি খাবার টেবিল- যা একেবারেই অনুচিত। এছাড়া আমাদের দেশে সারাদিন না খেয়ে থেকে ইফতারে তেলে ভাজা ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবারের অভ্যাস দেখা যায়, যা তৈরী করতে পারে মারাত্নক স্বাস্থ্য ঝুঁকি।
এই গরমে ইফতারের খাবার উপাদান হিসেবে যেসব আইটেম থাকা দরকার প্রতিদিনকার ইফতারি আয়োজনে
পুষ্টিকর পানীয়
রমজান এলেই বিভিন্ন আকর্ষণীয় ইফতার রেসিপি দেখা যায় টিভি প্রোগ্রামে, পত্রিকায়, সবখানে। কিন্তু সেই তুলনায় পুষ্টিকর তরল খাবার নিয়ে সচেতনতা দেখা যায় না। অথচ গরমে সারাদিন রোজা রাখলে দেহে দেখা দেয় মারাত্নক পানিশূন্যতা। শরীরের পানির এই ঘাটতি পূরণ করতে ইফতারে বেশি করে পুষ্টিকর পানীয় রাখতে হবে। ইফতারে পানীয় হিসেবে রুহ আফজা, ট্যাং ও লেবুর সরবত জনপ্রিয়। কিন্তু দেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে ইফতার ডাইনিং টেবিল -এ রাখতে পারেন বিভিন্ন তাজা ফলের জুস, লেবু পানি, ডাবের পানি, আখের রস ও গুড়ের শরবত প্রভৃতি। এছাড়া শরবত তৈরিতে ব্রাউন সুগার বা বাদামি চিনি, তাল মিছরি, গুড় ও মধুর ব্যবহার আপনার পানির চাহিদার পাশাপাশি পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে শতভাগ।
মৌসুমী ফল
বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে আম, লিচু, জাম, কাঁঠাল, আনারস সহ গ্রীষ্মের বিভিন্ন মৌসুমী ফল। আমাদের দেশে ইফতার ফল দিয়ে করার খুব একটা প্রচলন নেই। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশেই ইফতারে ফলাহার করার রীতি রয়েছে। এইসব মৌসুমি ফল একইসাথে সুস্বাদু, পুষ্টিকর ও পানিশূন্যতা দূর করতে অতুলনীয়। কারণ ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন ও মিনারেল, যা আপনাকে এই গরমে রাখবে সুস্থ। এছাড়া ফলের তৈরী বিভিন্ন খাবার ও মিষ্টিজাতীয় ডেজার্ট রাখতে পারেন ইফতারের উল্লেখযোগ্য খাবার হিসেবে।
কাঁচা ছোলা
বাংলাদেশে ইফতারে ছোলা একটি জনপ্রিয় খাবার। ছোলায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে। তবে অতিরিক্ত তেল ও মসলায় ভুনা ছোলা অনেক সময় উপকারের থেকে ক্ষতিই করে বেশি। তারচেয়ে বেশি উপকার পেতে পারেন কাঁচা ছোলায়। ছোলা ভাল করে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে ইফতারের আগে আগে পেঁয়াজ, রসূন, মরিচ, আদা ও খাঁটি সরিষার তেল দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে পরিবেশন করতে পারেন। এছাড়া সিদ্ধ ছোলার সাথে পেঁয়াজ, মরিচ, শশা, টমেটো ইত্যাদি মিশিয়ে খেলেও অনেক খাদ্য আঁশ ও প্রোটিন পাওয়া যায়, যা আপনার ক্লান্ত শরীরে যোগাবে প্রয়োজনীয় প্রাণ শক্তি।
মিষ্টি জাতীয় খাবার
ইফতারে চিড়া, খেজুর ও আখের গুড়, পাটালি, জিলাপি ও বন্দিয়া জাতীয় খাবারের প্রচলন রয়েছে আমাদের দেশে। তবে ইফতারিতে একটি আদর্শ খাবার হতে পারে দই-চিড়া ও দুধ-চিড়া অথবা কলা-চিড়া ও আম-চিড়া। এইসব খাবার পেট ঠান্ডা রাখে ফলে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা থাকে না। তাই সেহরি ও ইফতারের খাবার হিসেবে এই ধরণের খাবার বেশি পরিমাণে রাখতে পারেন মেনুতে। এছাড়া পরিমিত পরিমাণে মিষ্টান্নের সাথে গুঁড়া দুধ কিংবা তরল দুধের তৈরি মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন ফালুদা, কাস্টার্ড, পুডিং, ফিরনি বা পায়েস ও সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে চা অথবা কফি কিংবা পেট গরম করে এমন খাবার যত কম খাওয়া যায়, ততই মঙ্গল।
শাকসবজি
উচ্চ ভিটামিন সমৃদ্ধ শাকসবজি আপনাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়, যা আপনার শরীরের জন্য অতি দরকারি। তাই মাঝে মাঝে চকবাজারের ইফতার খেতে পারেন, কিন্তু খেয়াল রাখবেন অধিকাংশ সময়ই যেন ইফতার আলুর চপ, অতিরিক্ত তেল চপচপ করে ভাজা খাবার, হালিম, বিরিয়ানি প্রভৃতি কম থাকে। তারচেয়ে সবজি পাকোড়া, সবজীর স্যুপ, শাকের বড়া, বেগুনী ও রসূনের চপ প্রভৃতি খাবার বেশি উপকারি হতে পারে।
– এছাড়া ইফতারের ক্ষেত্রে যেসব বিষয় মনে রাখতে পারেন –
- মাগরেবের আযান পড়ার সাথে সাথে খুব তাড়াহুড়া করে অধিক পরিমাণে ইফতার করা উচিৎ নয়। কারণ সারাদিন না খেয়ে থাকার পর একসাথে অনেক বেশি খাবার আপনার জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে। ধীরে ধীরে সময় নিয়ে ইফতার করুন।
- অনেকেই ডায়েট ইফতার করেন যেটা একেবারেই উচিৎ না। সারাদিন না খেয়ে থেকে এমনিতেই আপনার শরীর দুর্বল থাকে। তাই ইফতারে ডায়েট না করে সুষম খাবার গ্রহণের প্রতি মনযোগী হওয়া উচিৎ।
- চেষ্টা করবেন ইফতারে যেন সব ধরণের খাদ্য উপাদান থাকে।
- ইফতারে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক না। তারচেয়ে অল্প বিরতিতে কিছুক্ষণ পর পর খাবার গ্রহণ করতে পারেন।
- ইফতার করার পরপরই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছুটা হাঁটাচলা করুন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, ইদানিং গরম বেশি বলে আগেই পানি ফ্রিজ এ রাখতে পারেন কিংবা ফ্রিজের বরফ ব্যবহার করা যেতে পারে। মনে রাখবেন রোজা রাখার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে পানিশুন্যতা, যা আপনাকে হিটস্ট্রোকের দিকে ঠেলে দিতে পারে। তবে শুরুতেই একসাথে অনেক পানি পান করা অনুচিৎ।
আরো দেখুনঃ সেহেরীর খাবার তালিকা
An SEO content writer, optimizer, and digital marketer who enjoys working with the chemistry of content, marketing, and audience. Personally, I believe that CREATIVE THINKING is the best part of living as a human. Not only a quick learner but also a curious soul of the time.